কুষ্টিয়া জেলায় পদ্মা গড়াইসহ বেশকিছু ছোট বড় নদী রয়েছে যেখানে প্রতিবছরই ওই সব নদীর পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় এমন ব্যক্তির সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু এ জেলায় ডুবুরী না থাকায় যাদের নদীর পানিতেই সলিল সমাধি হয় তাদের অনেকের মরদেহ পর্যন্ত উদ্ধার সম্ভব হয় না। আবার কারো কারো মরদেহ উদ্ধার হয় দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর। যা লাশ শনাক্তেও পরিবার স্বজনদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আবার কারো মৃতদেহ পর্যন্ত উদ্ধার হয়না। যে কারনে তাদের পরিবার স্বজনদের মাঝে দিনের পর দিন চলে নিরব আহাজারি। এদিকে কুষ্টিয়ার ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঢাল তলোয়ার ছাড়াই ডুবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মানুষের উদ্ধারের চেষ্টা করে এবং অপেক্ষা করতে থাকে কখন খুলনা থেকে ডুবুরি আসবে।
যদিও খুলনা থেকে ডুবুরি এসে কুষ্টিয়াতে পৌঁছাতে সময় লাগে ৫/৬ ঘন্টা। ততক্ষণে ডুবন্ত ব্যক্তি নদীর স্রোতে তলিয়ে যায়। কখনো বা তাকে খুঁজতে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত ডুবুরীদের পানির তলদেশে তল্লাসী চালাতে হয়। এতে একদিকে যেমন দীর্ঘ সময় অতিবাহীত হয় অন্য দিকে নিখোঁজ ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধারের আশংকা ততটাই হতশায়-দুশ্চিন্তায় পরিণত হতে থাকে। কখনো কখনো ডুবে যাওয়া নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে বা অনেককে খুঁজে না পেয়ে উদ্ধার কাজের সমাপ্তি ঘোষণা দেয়া হয়।
কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আলী সাজ্জাদ বলেন, কুষ্টিয়া প্রতিবছর গড়ে ৪/৫ জন পানিতে ডুবে মারা যায়। এই স্টেশনে ডুবুরি টিম নেই। ডুবুরি টিম থাকলে আমরা ডুবন্ত মানুষকে দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধার করতে সক্ষম হোতাম। কেউ নদীতে ডুবে গেলে আমাদের খুলনা স্টেশন থেকে ডুবুরি টিম না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এতে প্রায় ৫/৬ ঘন্টা ডুবুরি টিমের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এতক্ষণ অপেক্ষার কারণে ডুবন্ত মানুষকে উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় ডুবে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তি স্রোতে ভেসে অনেক দূরে চলে যায়। হতাশার কথা হলো এই জেলায় পদ্মা ও গড়াই নদীর মত বড় নদী রয়েছে কিন্তু এখানে কোন ডুবুরি টিম নেই। আপনারা সাংবাদিক আপনারা একটু আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে একটা ডুবুরি টিমের ব্যবস্থা করে দিতেন। আমি এবিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছি কিন্তু কোন ফল পাইনি।
তিনি বলেন, গত (বৃহস্পতিবার) কুষ্টিয়া ঘোড়ারঘাট এলাকায় এক ব্যাংক কর্মকর্তারা গোসল করতে এসে ডুবে যায় দুপুর একটার সময় ডোবে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় ডুবন্ত ব্যাংক কর্মকর্তা রাফসানকে খুঁজে না পেয়ে খুলনা স্টেশন থেকে ডুবুরি টিম আনি। সেই ডুবুরি টিম আসতে আসতে ৫ ঘন্টা লেগে যায়। বিকেল ৬টা থেকে ডুবুরি টিম খোঁজাখুঁজি শুরু করে এবং রাত ৯ টার সময় বন্ধ করে। গড়াই নদীতে বন্ধুদের সঙ্গে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয়েছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা রাফসান (৩০)। নিখোঁজের ১৮ ঘন্টা পর শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে ঘোড়ার ঘাট ড্রেজিং পয়েন্টে তার লাশ ভেসে ওঠতে দেখে স্থানীয়রা। আজ শুক্রবার সকাল ৭ টায় রাফসান এর লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস এর ডুবুরি টিম। কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কুষ্টিয়ার স্হানীয় সংবাদ পত্র দৈনিক আন্দোলনের বাজার পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক আনিসুজ্জামান ডাবলু বলেন, প্রতিবছরই এ জেলায় নদীর পানিতে ডুবে অনেকের প্রাণহানি ঘটে। কিন্তু এ জেলায় ডুবুরী টিম না থাকায় ডুবে নিখোঁজদের দ্রুত উদ্ধারে বিলম্ব হয়। কুষ্টিয়াতে ডুবুরী টিম থাকলে ডুবে যাওয়া মানুষদের তাৎক্ষণিক উদ্ধার অভিযানে নামলে হয়ত তাদের মধ্যে অনেককে জীবিত উদ্ধার সম্ভব। কেউ ডুবে নিখোঁজ হলে তাৎক্ষণিক ডুবুরী দলের সদস্যরা তল্লাসী চালালে জীবিত হোক আর মৃত হোক তাকে দ্রুত উদ্ধার সম্ভব।
তিনি বলেন, যে কোন দূর্ঘটনা ঘটলে কুষ্টিয়া ফায়ার স্টেশনের কর্মিরা যে ভূমিকা রাখেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। যদি এখানকার ফায়ার স্টেশনে ডুবুরী টিম যোগ হয় তাহলে এ জেলায় ডুবে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত উদ্ধার সম্ভব হবে। এতে প্রাণহানির ঘটনা কমে আসবে। তাই অতিদ্রুত এ জেলায় একটি ডুবুরী টিম প্রয়োজন এবং এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করবেন বলে জানান।
কুষ্টিয়ার আরেক জনপ্রিয় ও বহুল প্রচারিত স্হানীয় সংবাদ পত্র দৈনিক দেশতথ্য পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক আব্দুল বারী বলেন, অনেক চাওয়া পাওয়ার মধ্যেও হতাশার খবর হলো এ জেলায় কোন ডুবুরী টিম নেই। যে কারনে প্রতিবছর এ জেলায় নদীতে ডুবে নিখোঁজ হচ্ছে অনেক মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকের মরদেহ দেরিতে ভেসে উঠার পর উদ্ধার হয়। আবার ডুবুরী না থাকায় ডুবে যাওয়া ব্যক্তি দ্রুত উদ্ধার না হওয়ায় কারো মরদেহটিও পাইনা তার পরিবার স্বজনরা! এ জেলাতে ডুবুরী টিম নেই এটা আমাদের হতাশার এবং দু:খজনক। আমাদের কুষ্টিয়ায় নদী গুলোতে প্রতি বছরই পানি ডুবে একাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ডুবুরী না থাকায় লাশটিও পাইনা ।অনেক পরিবার-স্বজনরা! এ ব্যপারে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।